Disable Preloader

Blog Details

কারিকুলাম বা শিক্ষাক্রমঃ শিখন ও শিক্ষণের প্রধান হাতিয়ার

কারিকুলাম যার বাংলা শিক্ষাক্রম। আপনি যদি শিক্ষকতায় যুক্ত থাকেন অথবা শিক্ষকতায় আসতে চান অথবা আপনি যদি অভিভাবক হয়ে থাকেন তবে আপনার অবশ্যই জানা উচিত এই কারিকুলাম বা শিক্ষাক্রম সম্পর্কে। কারন শিখন ও শিক্ষণের প্রধান হাতিয়ারই হচ্ছে এই কারিকুলাম। কারিকুলাম বা শিক্ষাক্রম কেন এত গুরুত্বপূর্ণ তা জানার জন্য আমাদেরকে যেতে হবে শিক্ষাক্রমের সংজ্ঞা বা শিক্ষাক্রম কাকে বলে।

শিক্ষাক্রম নিয়ত পরিবর্তনশিল একটি বিষয়। তাই দেশ ও কালভেদে এর সংজ্ঞা ভিন্ন ভিন্ন। সাধারণভাবে যদি কারিকুলাম বা শিক্ষাক্রম সম্পর্কে বলতে যাই, তবে বলতে হবে শিক্ষাক্রম হচ্ছে একটি দেশে, শিক্ষাদানের একটি স্তরে কি পড়াব, কেন পড়াব, কিভাবে পড়াব, কে পড়াবেন, কারা পড়াবে, কতটুকু পড়বে, পড়ানোর জন্য কি কি শিক্ষা উপকরন হবে, পড়ানোর উদ্দেশ্য কি অর্থাৎ একটি বিষয় পড়লে শিক্ষার্থীর মধ্যে কি কি দক্ষতা ও যোগ্যতা আসবে ইত্যাদি বিষয়ের বিস্তারিত হল কারিকুলাম বা শিক্ষাক্রম।   

সংজ্ঞা শুনেই বুঝতে পারছেন শিক্ষাক্রম মুলত একটা গাইড লাইন, একটা পথ নির্দেশিকা। অর্থাৎ শিক্ষাক্রম আপনাকে পথ দেখাবে আপনি একজন শিক্ষক বা অভিভাবক হিসাবে আপনার শিক্ষার্থী অথবা সন্তানকে কিভাবে তার একাদেমিক লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করবেন।

উদাহরণ স্বরূপ যদি বলি যে, আপনাদের মধ্যে কোন একজন প্রাক প্রাথমিক স্তরের একজন শিক্ষার্থীর শিক্ষক অথবা অভিভাবক।  এখন একজন শিক্ষক বা অভিভাবক হিসাবে আপনি, আপনার সন্তান বা শিক্ষার্থীকে বাংলা, ইংরেজি বা গণিত বিষয়ের কতটুকু শিখাবেন, শিখানোর সময় কি কি কৌশল অবলম্বন করবেন, কি ধরনের শিক্ষা উপকরণ ব্যবহার করবেন, আপনি তাকে ছড়ায় ছড়ায় গননা শিখাবেন নাকি ভিডিও দেখিয়ে শেখাবেন ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে আপনি পথ নির্দেশনা পাবেন।

অভিভাবক বা শিক্ষক হিসাবে যখন আপনি শিক্ষাক্রম কি, এর লক্ষ্য কি, উদ্দেশ্য কি ইত্যাদি জানবেন তখনই আপনার শিক্ষণ পদ্ধতি হবে আকর্ষণীয়, শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক, শিখন ও শিক্ষন হবে আনন্দময়। আর যদি আপনি শিক্ষাক্রম সম্পর্কে কিছু না জানেন তবে আপনি শিক্ষক বা অভিভাবক হিসাবে একজন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে অনেক কিছু আশা করা শুরু করবেন। যেটা আমাদের অভিভাবকরা অনেক সময় করে থাকেন। অভিভাবকদের অনেককেই দেখেছি যে তার ছেলে বা মেয়ে হয়ত ১ম বা দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ছে। কিন্তু তিনি তার সন্তানকে রাতারাতি বিরাট বিদ্বান বানানোর জন্য চাপাচাপি শুরু করে। স্কুল, কোচিং, প্রাইভেট সব কিছুর মাধ্যমে শিক্ষার্থীর মাথা খেয়ে ফেলে। এক পর্যায়ে ঐ শিক্ষার্থী ৫ম শ্রেণি পাশ করার আগেই পড়াশুনার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। শিক্ষকরাও অনেকে সময় শিক্ষার্থীদের মধ্যে তুলনা করে। একজন শিক্ষার্থীকে আরেক জনের সাথে তুলনা করে একজনকে হয়ত গাধা, ছাগল, রাম ছাগল ইত্যাদি বলে শিক্ষার্থীর মন নষ্ট করে দিচ্ছে। অথচ তিনি যদি শিক্ষাক্রম সম্পর্কে জানতেন তবে বুঝতেন একেক শিক্ষার্থী একেকভাবে শিখে আবার একেক জন শিক্ষার্থীর শেখার বা বুঝার যে গতি বা সময় সেটাও ভিন্ন ভিন্ন হয়। শিক্ষক হিসাবে প্রতিটি শিক্ষার্থীকে শিক্ষার্থীর শ্রেণি ও বয়স অনুযায়ী শিক্ষাক্রমে বর্ণিত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হাসিল করতে হলে শিক্ষক হিসাবে যে কতটা ধৈর্য ধরতে হবে, কতটা আন্তরিক হতে হবে, কতটা মানবিক হতে হবে ইত্যাদি একজন শিক্ষক তখনই বুঝবেন যখন তিনি শিক্ষাক্রম সম্পর্কে জানার চেষ্টা করবেন।

শিক্ষাক্রম যে শিখন ও শিক্ষণ প্রক্রিয়ায় কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা নিয়ে দিনের পর দিন আলোচনা করা যাবে। তারপরও এই আলোচনার উদ্দেশ্য হচ্ছে আপনাদেরকে একটু সচেতন করা। আপনাদেরকে শিক্ষাক্রম সম্পর্কে জানার গুরুত্বটুকু বুঝানো। কারন আমি বিশ্বাস করি, একবার যদি আপনি এর গুরুত্ব বুঝতে পারেন তবে শিক্ষক কিংবা অভিভাবক হিসাবে আপনি আপনার শিক্ষার্থী কিংবা সন্তানের শ্রেণির জন্য প্রযোজ্য শিক্ষাক্রম সম্পর্কে আপনি নিজেই জেনে নিবেন। আপনার শিক্ষার্থী বা সন্তানের শিক্ষাজীবনকে করে তুলবেন বইচিত্রময়, আনন্দময়।

 

লেখক 

হাসান মোহাম্মদ ফারুক

প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান শিক্ষক 

সিডা ইনোভেটিভ স্কুল